বুদ্ধের সময়ে(মিথ্যাদৃষ্টি সম্পন্ন)ছয়জন তীর্থঙ্কর(লোকশিক্ষক)
সংরক্ষ:করা হয়েছেন
তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ বলেছিলেন,আপন মিথ্যাদৃষ্টি ও তদনুরুপ কর্মের ফলে দীর্ঘবিদর্শকভ্রাতা ষাট যোজন পরিমিত বিশাল দেহ লাভ করে চার বুদ্ধান্তর পরিমাণ কাল মহানরকে উত্থান অবস্থায় অপ্রমেয় দুঃখভোগ করছে।সেই মিথ্যাদৃষ্টি সম্পন্ন তাপসের উপদেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে তাঁর সেবক পাঁচশত গৃহস্থ নরকে পতিত হয়ে আজও নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে।বুদ্ধের সমসাময়িক কালে পূরণ কশ্যপ প্রভৃতি ছয়জন লোক শিক্ষক বলেছিলেন,আমরা অনুত্তর সম্যক সম্বোদ্ধি লাভ করে সম্যক সম্বুদ্ধ হয়েছি, এই মিথ্যাধারণা পোষণ ও প্রচার করে যেমন নিজের অনিষ্ট করেছেন, তেমনি তাঁদের মতাবলম্বী অনেক অন্ধবিশ্বাসী মূর্খেরও সর্বনাশ করেছেন। ভগবান তথাগত পরাভব সূত্রে বলেছেন----------
অসন্তস্স পিযো হোতি সন্তে না কুরুতে পিযং,
অসতং ধম্মং রোচেতি তং পরাভাবতো মুখং,
বুদ্ধ প্রভৃতি সম্যক জ্ঞানি ও সৎপুরুষদের প্রিয় না হয়ে যারা জ্ঞানহীন অসাধু ব্যক্তিদের প্রিয় হয় এবং তাদের ধর্মকে শ্রদ্ধা করে ও মেনে চলে তাদের পরাভব হয়।ইহ ও পর জীবনে তাদের অধোগতি ও মহাদুঃখ ভোগ করিতে হয়।
নিম্নে ছয়জন তীর্থঙ্কর সম্পর্কে সংক্ষেপে বণর্না করা হলঃ
১. পূরণ কশ্যপ
------------------------
বুদ্ধের সময়ে এক শ্রেষ্টীর একজন কম একশত দাস ছিল।শ্রেষ্ঠী কিছুদিন পর অন্য একজন দাস সংগ্রহ করে দাসের সংখ্যা একশত পরিপূর্ণ করেন।নতুন দাসটির দ্বারা শত পূর্ণ হওয়ায় তার নাম হল পূরন।সৌভাগ্যসূচক শত সংখ্যা পুরণকারী এই দাসকে মঙ্গলদাস ও বলা হত।এই কারণে তার ভালমন্দ সম্বন্ধে কেউ কিছু বলত না। একসময় ভাগ্যবিপর্যয় হতে মুক্তি পবার জন্য এক গভীর রাতে পালিয়ে যায়। পথে চোরেরা তার বস্ত্র কেড়ে নেয়। সে নগ্নাবস্থায়ই লোকালয়ে যেতে বাধ্য হয়। মানুষেরা তাকে তদবস্থায় দেখে ইনি আসক্তিহীন অর্হৎ এ ধারনায় প্রচুর খাদ্যদ্রব্যাদির দ্বারা পূজা করে।নগ্নতাই তার এই পূজা সৎকারের কারণ জেনে কেউ কাপড় দিলেও তিনি ব্যবহার করতেন না।এই নগ্নতাই হল তার প্রব্রজ্যা।তখন হতে তিনি জনসাধারণের মধ্যে বিশিষ্ট সন্নাসীরুপেই পরিচিত হন।পাঁচশত ব্যক্তি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি কশ্যপ গোত্রীয় ছিলেন বলে পুরণ কশ্যপ নামে পরিচিত হন। পুরণ কশ্যপ বলতেন,কায়ে বা বাক্যে যে কোন প্রকারের পাপ করলে বা করালে পাপ হয় না--এ হচ্ছে তীর্থঙ্কর পুরণ কশ্যপের মতবাদ। তিনি ছিলেন অত্রুিয়াবাদী।
২.মক্ খালি গোসাল
------------------------------------
এক ধনীর পূর্ণগর্ভা দাসী গোশালায় কাজ করতে গিয়ে তথায় একপুত্র সন্তান প্রসব করে। গোশালায় জন্ম হয়েছে বলে সবাই তাকে গোশাল বলেই ডাকত।সে বড় হলে প্রভু তাকে এক তৈলপূর্ণ মৃৎপাত্র অন্য প্রতিবেশীর গৃহে নিয়ে যাবার জন্য আদেশ দেন। কিছুক্ষণ পূর্বে বৃষ্টি হওয়ায় পথ পিচ্ছিল হযেছিল।প্রভু বলেন "তাত'! সাবধানে যাবে মা খলি- স্থালিত হইও না।সাবধানে চলতে চেষ্টা করলেও তার পদস্খলিত হয়ে সে পড়ে যায়।তাতে তার তৈলপত্র ভেঙ্গে গিয়ে সব তৈল নষ্ট হয়ে যায়। প্রভুর তিরস্কার ও শাস্তির ভয়ে পালিয়ে যাবার সময় অন্যেরা তাকে ধরতে গিয়ে তার পরিহিত কাপড় ধরে। সে কাপড় ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।অন্যান্য সব ঘটনা পুরণ কশ্যপ এর মত জ্ঞাতব্য।প্রভুর মা খলি হতে মক্ খলি শব্দের উৎপত্তি। তিনি যখন সমাজে লোক শিক্ষক রুপে প্রসিদ্ধ হন, তখন মক্খালি গোসাল নামে পরিচিত হন।,,,,,,তার উক্তি ছিল এই,প্রাণীদের শুদ্ধি বা অশুদ্ধির কোন হেতু বা প্রত্যয় নেই।অহেতু অপ্রত্যয়ের প্রাণীরা শুদ্ধও অশুদ্ধ হয়"--এই হচ্ছে তীর্থঙ্কর মক্ খালি গোশালের মতবাদ।তিনি ছিলেন অহেতুবাদী'।
৩. নিগ্রন্থ নাথপুত্র
-----------------------------
মহাবীর বৈশালির এক বিশিষ্ট সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। যৌবনে তিনি সন্ন্যাস নিয়ে জনসংঘকে আপন কল্পিত শাস্ত্র শিক্ষা দিতেন।তিনি প্রচার করতেন স্ত্রী- পুত্র, ক্ষেত্রবস্ত প্রভৃতি সংসারের কিছুরই প্রতি তাঁর আসক্তিরুপ ক্লেশগ্রন্থ নেই। সেজন্য তিনি লোক সমাজে নির্গ্রন্থ এবং নাথের পুত্র বলে নির্গ্রন্থ নাথ পুত্র নামে পরিচিত ছিলেন।তার বহু শিষ্য ও গৃহস্ত ভক্ত ছিলেন।তিনি ছিলেন চতুর্যাম---সংযমবাদী।
৪. বেলট্ঠীপুত্র সঞ্জয়
-----------------------------------------
তেমন আর একজন লোকশিক্ষকের নাম ছিল সঞ্জয়। তাঁর পিতার নাম ছিল বেলট্ঠী। তাই তিনি বেলট্ঠী পুত্র সঞ্জয় নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁরও অনেক সন্ন্যাসী শিষ্য ও গৃহী ভক্ত ছিলেন।তিনি ছিলেন বিক্ষেপবাদী বা অমর বিক্ষেপী।
৫.পকুধ কাত্যায়ন
---------------------------------
পকুধ নামক আর একজন লোকশিক্ষক কাত্যায়ন গোত্রে উৎপন্ন বলে সর্বসাধারণের নিকট পকুধ কাত্যায়ন নামে পরিচিত।তারও অনেক সন্নাসী শিষ্য ও গৃহী ভক্ত ছিল। তিনি ছিলেন শীতল জল ত্যাগী। পান,স্নান এবং শৌচাদি সব ব্যাপারে তিনি গরম জল বা কাজিঁ ব্যবহার করতেন।এই বিচিত্র-- সন্ন্যাসীর ধর্মবিশ্বাস ছিল বিচিত্রতর।নদী বা কোন জলাভুমি অতিক্রম করতে হলে শীলভঙ্গের ভয়ে তিনি বালুকা বা ধূলির স্তূপ নির্মাণ করে অধিষ্ঠান করে সে- স্তূপে আপন শীলরাশি রেখে যেতেন।তিনিও ছিলেন অক্রিয়াবাদী।
৬. অজিত কেশকম্বলী
------------------------------------
বুদ্ধের সমকালীন অজিত নামে আর একজন লোকশিক্ষক ছিলেন।তিনি নিত্য মনুষ্য- কেশ- নির্মিত কম্বল ব্যবহার করতেন বলে তিনি অজিত কেশকম্বলী নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।তার ও বহু সন্ন্যাসী এবং গৃহী শিষ্য ছিল। তার উক্তি ছিল এই, দানের এবং মাতাপিতাদি গুরুজনের সেবাদিতে কোন ফল নেই, মৃত্যুর সঙ্গেই প্রাণীদের উচ্ছেদ হয় বিনাশ হয়,পুনর্জন্ম হয় না"- এ হচ্ছে তীর্থঙ্কর অজিত কেশকম্বরের মতবাদ। তিনি ছিলেন নাস্তিক বা উচ্ছেদবাদী।
এই ছয়জন লোকশিক্ষক মিথ্যাদৃষ্টি পরায়ণ হওয়ায় মৃত্যুর পর তারা এবং তাদের শিষ্য ও গৃহী ভক্তরা মহা নরকে উৎপন্ন হয়ে অপরিনাম দুঃখ ভোগ করতেছে। বালগন ( মুর্খগণ) নিজের এবং অনুগামীদের যেমন সর্ব উন্নতি ও সুখ বিনাশ করে সর্বপ্রকারে মহাদুঃখের কারণ হয়,তেমন পন্ডিত সৎপুরুষগণ নিজের এবং অনুগামীদের সকল প্রকার দুঃখ ও অশান্তি বিনাশ করে সর্ববিধ সুখ শান্তি বর্ধন করে থাকেন। তাই আমাদের ও সকলের উচিত গুরুবাদে পক্ষপাদ দুষে দুষ্ট না হয়ে তথাগত বুদ্ধের নির্ধেশিত পথে নিজের জীবনকে পরিচালিত করে সম্যক পথে অগ্রসর হয়ে দুর্লভ মানব জীবনকে সার্থক করা।🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
(নিজে পড়ুন শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন)
No comments:
Post a Comment