ভগবান বুদ্ধ ও এক রোগী ভিক্ষু
...............................................................
নৈতিক ও মানবিক গুণাবলিতে ভরপুর। ভগবান বুদ্ধ জন্ম-জন্মান্তরে দশ পারমীর চর্চা করে নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষতা সাধনপূর্বক বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন। বুদ্ধ শুধু নিজেই নৈতিক জীবনযাপন করেননি, তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্য এবং অনুসারীদেরও নৈতিক জীবনযাপনের শিক্ষা দিয়েছেন। নৈতিকতা ছিল মহামতি বুদ্ধের প্রচারিত ধর্মবাণীর মূল ভিত্তি। নিচে গৌতম বুদ্ধের জীবনে নৈতিকতা প্রদর্শনের নিদর্শন এবং নৈতিক উপদেশ সম্পর্কে এক ঘটনার সর্ম্পকে জানব।
বুদ্ধত্ব লাভের পর গৌতম বুদ্ধ পঁয়তাল্লিশ বছর সকল প্রাণির দুঃখমুক্তির জন্য ধর্ম প্রচার করেন। এসময় তিনি ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি সকল প্রাণির সেবা ও কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্য এবং অনুসারীদের নৈতিক ও মানবিক কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দিতেন। এখানে আমরা বুদ্ধের জীবনে নৈতিকতা প্রদর্শনের একটি কাহিনী পাঠ করব।
একটি ছোট বিহারে কয়েকজন ভিক্ষু থাকতেন। সেই বিহারে তিষ্য নামে একজন ভিক্ষু ছিলেন, যাঁর সাথে কারও সদ্ভাব ছিল না। সবাই তাঁকে এড়িয়ে চলতেন। একবার তিনি ভীষণ চর্মরোগে আক্রান্ত হন। তাঁর গায়ের ক্ষত থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে লাগল। এরকম তিনি যন্ত্রণাকাতর অবস্থায়ও তাঁর সেবায় কেউ এগিয়ে এলো না। হঠাৎ বুদ্ধ এ বিহারে আগমন করলে সেবা-শুশ্রুষাবিহীন মারাত্মক রোগাক্রান্ত এ ভিক্ষুকে দেখেন। বুদ্ধ নিজেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেবায় লেগে যান।
তিনি সেবক আনন্দকে নিয়ে নিজ হাতে রোগীর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করেন। তাঁকে স্নান করান। তারপর গা মুছিয়ে পরিষ্কার বিছানায় শুইয়ে দেন। বুদ্ধ বিহারের ভিক্ষুদের ডেকে রোগাক্রান্ত ভিক্ষুকে সেবা না করার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বুদ্ধ তাঁদের কাছ থেকে সমস্ত ব্যাপার শুনে খুব অসন্তুষ্ট হন। তিনি তাঁদের আচরণকে অনৈতিক ও অমানবিক বলে তিরষ্কার করেন এবং হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করার উপদেশ দেন। হে ভিক্ষুগণ, তোমাদের কারো মা –বাবা কেও নেই দেখার জন্যা সেবা করার জন্যা, তোমরা নিজেরা যদি নিজেদের খেয়াল না রাখো তাহলে কে রাখবে?
অতঃপর তিনি তাঁদের বললেন, ‘দরিদ্রের সহায় হওয়া, অরক্ষিতকে রক্ষা করা, রোগীর সেবা করা, মোহাচ্ছন্নকে মোহমুক্ত করা সকলের নৈতিক কর্তব্য।’ তিনি আরও বললেন, ‘এ জগতে মাতা-পিতা, শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, আর্তপীড়িত এবং গুরুজনের সেবায় সুখ লাভ করা যায়।’
উপদেশ দানের পর বুদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য নিয়ম প্রবর্তন করলেন: অসুখের সময় শিষ্য গুরুর, গুরু শিষ্যের, সতীর্থ সতীর্থের সেবা করবে
No comments:
Post a Comment