Monday, 17 June 2019

*কৃশা গৌতমী*
:::::::::::::::::::::::::
বুদ্ধের সময়ে কৃশা গৌতমী শ্রাবস্তী নগরের এক গরিবের ঘরে জন্মগ্রহন করেন।তাঁর নাম ছিল গৌতমী।তাঁর দেহ অত্যন্ত কৃশ হওয়ায় তিনি কৃশা গৌতমী নামে অভিহিত হন। তাঁর বিবাহিত জীবনে তিনি সুখ লাভ করতে পারেননি।অনাদর-অবহেলায় কেটেছে তাঁর জীবন। অসময়ে তাঁর স্বামীও মৃত্যু বরন করেন।লোকে তাকে অনাথা বলত।কিন্তু এক পুত্রসন্তান প্রসব করে তিনি সম্মান লাভ করেন। পুত্রটিই ছিল তাঁর একমাত্র আশা -ভরসা। পুত্রটি বড় হয়ে ক্রমে কৈশোরে উত্তীর্ণ হলে হঠাৎ তারও মৃত্যু হয়। পুত্রের মৃত্যুতে তিনি শোকে পাগল হয়ে যান। একমাত্র পুত্রের মৃত্যু তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। সন্তানের মৃতদেহ কোলে নিয়ে পাগলের মতো তিনি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে লাগলেন। সকলের কাছে মৃত সন্তানকে বাঁচানোর জন্য ঔষধ ভিক্ষা চাইলেন। ঔষধ কেউ দিতে পারলেন না। বরং নগরবাসী কেউ কেউ তাঁকে পাগল বলে ভৎর্সনা করলেন।কৃশা গৌতমী কারো কথাতেই ভ্রুক্ষেপ করলেন না। সন্তাকে বাঁচানোর আশায় তিনি ছুটে চললেন প্রত্যেকের দুয়ারে দুয়ারে। অবশেষে এক মহৎ ব্যক্তি তাঁকে তথাগত বুদ্ধের কাছে গিয়ে ঔষধ প্রার্থনা করতে বললেন।
অতঃপর কৃশা গৌতমী মৃত সন্তান কোলে নিয়ে বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হন। উপস্থিত হয়ে তিনি বুদ্ধকে বললেন; ভগবান! আমার সন্তানের জন্য ঔষধ দিন। বুদ্ধ কৃশা গৌতমীর দিকে তাকালেন এবং ধ্যান চেতনায় দেখলেন কৃশা গৌতমীর পূর্বজন্মের অনেক সুকৃতি আছে।কিন্তু এ জন্মের নানাবিধ কর্ম ও কর্মফলে তার হৃদয় কষ্টে ভরপুর।বুদ্ধ তার মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য তাঁকে বললেন; নগরে গিয়ে এমন একটি ঘর থেকে সরিষাবীজ নিয়ে এসো, যে ঘরে কখনো মৃত্যু হয়নি।' বুদ্ধের কথা শুনে কৃশা গৌতমী কিছুটা শান্ত হন এবং মৃত পুত্রকে বুকে নিয়ে তিনি নগরে প্রবেশ করেন। তিনি প্রতিটি ঘরের দরজায় গিয়ে সরিষাবীজ ভিক্ষা করে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ঘরে কোনো মৃত্যু ঘটেছে কি না। সকল ঘরে একই উত্তর পেল, এখানে কত মৃত্যু হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। তিনি বুঝতে পারলেন, কোনো ঘরই মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত নয়। জন্ম হলেই মৃত্যু অনিবার্য। সব বস্তু অনিত্য। অতঃপর পুত্রের সৎকার করে তিনি বুদ্ধের নিকট ফিরে যান। বুদ্ধ জিজ্ঞাসা করেন, গৌতমী! সরিষাবীজ পেয়েছ কি? কৃশা গৌতমী বললেন, ভগবান! সরিষাবীজের আর প্রয়োজন নেই। আমাকে দীক্ষা দিন। তখন বুদ্ধ তাকে বললেন, বন্যার স্রোত যেমন গ্রাম, নগর ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি ভোগবিলাসে রত মানুষও মৃত্যুর মাধমে ধ্বংস হয়ে যায়। বুদ্ধের উপদেশ শুনে কৃশা গৌতমী স্রোতাপত্তি ফল লাভ করে ভিক্ষুণীধর্মে দীক্ষা প্রার্থনা করেন। দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি খুব ভালোভাবে ভিক্ষুণী জীবনের নিয়ম পালন করেন।সকল প্রকার লোভ, হিংসা,মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয় করে তিনি অর্হত্বপ্রাপ্ত হন। বু্দ্ধ তাঁকে অমসৃণ বস্ত্র পরিধানকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেন। স্বীয় সাফল্যে উল্লসিত হয়ে তিনি অনেক গাথা ভাষণ করেছিলেন তার কিছু উপদেশ নিচে তুলে ধরা হলো:
১। সাধু ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা জ্ঞানীগণ প্রশংসা করেন। সাধু ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেন জ্ঞানী হওয়া যায়।
২। সৎ মানুষের অনুসরন করো। এতে জ্ঞান বর্ধিত হয়।
৩।চতুরার্য সত্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করো।
৪। আমি আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, নির্বাণ উপলদ্ধি করেছি।
৫। আমি বেদনামুক্ত, ভারমুক্ত। আমার চিত্ত সম্পূর্ণ মুক্ত।
সাধু সাধু সাধু

No comments:

Post a Comment