মহাকারুনিক ভগবান বুদ্ধ পবেয্যকবাসী ৩০ জন ভিক্ষুকে উপলক্ষ করিয়া দান শ্রেষ্ট কঠিন চীবর দানের প্রর্বতন করিয়াছিলেন। ভগবান বুদ্ধ এক সময় পঞ্চশত ষড়াভিঙ্ঘ অরহত ভিক্ষু সহ আকাশ পথে যাইয়া হিমালয়ের অনোবতপ্ত নামক মহাসরোবরে উপস্থিত হইলেন। দ্বিপদোত্তম অনুত্তর ধর্মরাজ তথাগত বুদ্ধ সহস্রদল পদ্মে উপবেশনে করিলেন এবং পঞ্চশত ভিক্ষু সংঘ তারাগনের ন্যায় বুদ্ধকে পরিবেষ্টন করিয়া শতদল পদ্মে উপবেশন করিলেন।এইরুপে অরহত শিষ্য পরিবৃত শাক্য পুত্রগন সূর্য্যের ন্যায় বিরোচিত হইতে লাগিলেন। এই অরহত ভিক্ষু সংঘকে সম্বোধন করিয়া শতপূণ্য লক্ষন তথাগত বুদ্ধ বলিলেন হে ভিক্ষু সংঘ তোমরা এই খানেই উপবিষ্ট হইয়া কটিন চীবর দানের মহাত্ন্য শ্রবণ কর।সেই শুভ মহুর্ত্তে বুদ্ধ কর্ত্তৃক আদিষ্ট হইয়া অরহত নার্গিত স্থবির বলিতে আরম্ভ করিলেন
১/ তিনি অনোবতপ্ত মহাসরোবরে স্বীয় কর্মফল ( এইরুপ প্রকাশ করিয়া ছিলেন আমি যখন বন্ধুমতি নগরে দানপতি ছিলাম,তখন।
২/নানাপ্রত্যয় দায়ক হইয়া ভিক্ষু সংঘকে যথাভিরুচি আচ্ছাদন, শয্যা.অন্ন,পানীয় ও যাগু প্রভূতি দ্বারা স্বহস্তে পূজা করিতাম।
৩/চতুদ্দর্শী, পঞ্চদর্শী ও প্রতিহায্য পক্ষে অষ্টাঙ্গিক উপোসথ পালন করিতাম।
৪/যাবজ্জীবন সেই ভিক্ষু ও বুদ্ধের শ্রাবক ছিলাম এবং তাহাদের প্রতি প্রসন্ন চিত্ত, সুমন ও পরিচর্য্যাকারী ছিলাম।
৫/আমি বর্ষাব্রতোল্তিত ভিক্ষু দিগকে কঠিন চীবর দান দিয়াছিলাম।প্রবারিত ভিক্ষুসংঘ আমার সেই দান গ্রহন করিলে।
৬/আমি করজোড়ে প্রদক্ষিন করিয়া কায় মন বাক্য ভিক্ষু সংঘের নির্কট ক্ষমা প্রার্থনা করিছিলাম।
৭/উত্তম গুন শ্রেষ্ট সংঘ মধ্যে কঠিন চীবর দান দিয়ে এই কল্প হইতে বিগত ত্রিশ কল্প পর্যন্ত দর্গতি অনুভব করি নাই।
৮/আটার কল্প দেবলোকে সুখ ভোগ করিয়াছি, চৌত্রিশবার দেবেন্দ্র হইয়া দেবকুলে রাজত্ব করিয়াছি।
৯/দেবরাজ্যের শ্রীধর সহস্রবার ব্রক্ষা হইয়াছি।মনুষ্য কুলে জম্ম পরিগ্রহ করিলে ধনঢ্য কুলেই উৎপন্ন হইতাম।
১০/মধ্যে মধ্যে চক্রবর্তী সুখ ও লাভ করিয়াছি।গননাতীত বিপুল প্রদেশ রাজ্যও ছিলাম
১১/ভোগ সম্পত্তিতে আমার উনতা হয় নাই।ইহা কঠিন চীবর দানের ফল।যেখানে যেখানে উংপন্ন ইহতাম তথায় সর্ববিধ সম্পদ লাভ করিয়া পরিষদের উত্তম হইতাম।ইহাও কঠিন চীবর দানের ফল।
১২/সুরম্য দেবলোক ত্যাগ করিয়া মানবকুলে উৎপন্ন হইলেও মানুষ্যদের মধ্যে উত্তম হইতাম।ইহাও কঠিন চীবর দানের ফল।
১৩/আমি সেই কুশল কর্ম দ্বারাই দেব নর লোকে সকলেরই প্রিয় পাত্র হইয়াছিলাম। সেইরুপ ভন্দ্র কর্মের ফলে এখন আমি অচলপদ (অরহত্ত্ব)প্রাপ্ত হইয়াছি।
১৪/অহো আমার দ্বারা সুন্দর কর্মই কৃত হইয়াছিল।তখন আমি সেই দান দিয়াছি,তৎপ্রভাবে দুর্গতি কি তাহা জানি নাই।ইহাও কঠিন চীবর দানের ফল।
১৫/আমি শুধু দেবও মনুষ্য এই দুই ভবেই উৎপন্ন হইয়াছি।অন্যগতি জানি না।ইহাও কঠিন চীবর দারের ফল।
১৬/ক্ষত্রিয় ও ব্রাক্ষানকুলে জম্ম গ্রহন করিতাম।হীনকুলে জম্ম গ্রহন করি নাই।ইহাও কঠিন চীবর দানের ফল।
১৭/জগতে প্রচলিত যত প্রকারের দান আছে সর্বাপেক্ষা কঠিন চীবর দানই শ্রেষ্ট এই দান দ্বারা অগ্র শ্রেষ্ট সর্ব প্রকার পূণ্যস্থ লাভ হয়।
১৮/ছোট বড় যত প্রকারের দান আছে একখানা কঠিন চীবর দানের ফলের তুলনায় ঐ দান ষোড়শংশের একাংশ ও হয় না
১৯/অকনিষ্ট ব্রক্ষালোক পরিমান উচ্চ রৌপ্যময় পর্বত দান করিলে ও একখানি কঠিন চীবর দানের তুলনায় ঐ রোপ্য পর্বত দানের পূণ্য ষোলভাগের একভাগ পরিমান হয় না।
২০/ভিক্ষু সংঘের যাবতীয় ব্যবহার্য্য বস্ত সবর্দা সংঘকে প্রদান করিলে ও একখানা কঠিন চীবর দান পূণ্যের ষোলভাগের একভাগ পূণ্য হয় না
২১/সুমেরু পর্বত প্রমান রাশি করিয়া সংঘ মধ্যে ত্রিচীবর দান করিলেও একখানা কঠিন চীবর দান পূণ্যের ষোলভাগের একভাগ ও হয় না।
২২/চুরাশি হাজার বিহার নির্মান করাইয়া দান করিলেও একটি ধাতু মন্দির দান পূণ্যের ষোড়শাংশের একাংশ পূণ্যেও হয় না।
২৩/অকনিষ্ট ব্রক্ষলোক পরিমান উচ্চ সুর্বণ নির্মিত ধাতু মন্দির নির্মান করাইয়া দান করিলেও একখানা কঠিন চীবর দান পূণ্যের ষোলভাগের একভাগ পূণ্যে ও হয় না।
২৪/হস্তী অশ্ব অশ্বতরী,রথও মনিমুত্তা বিভূষিতা কণ্যা,অযুত অযুত পরিমান দান করিলেও একখানা কঠিন চীবর দানের পূণ্যের ষোলভাগের একভাগে ও পূণ্যের ও হয় না।
২৫/ভিক্ষুদের পঞ্চ ফল যুক্ত ও পঞ্চ দোষ বিবর্জিত অথ্যাৎ সংঘের দোষ হননকারী বলিয়াই কঠিন চীবর দান অতি উত্তম।
২৬/আমি সেই কুশল কর্ম চেতনা ও প্রার্থনা দ্বারা মনুষ্য দেহ পরিত্যাগ করিয়া তাবতিংশ দেবলোকে দিব্য সুখ ভোগ করিয়া ছিলাম।
২৭/আমরা সুকৃত কর্মের ফলে তথায় সুর্বন বর্ণ প্রভাবস্বর বিমান পাইয়া ছিলাম। সেই শত যোজন দীর্ঘ ত্রিশযোজন প্রস্থ ও ষাট যোজন উচ্চ স্বগীয় প্রসাদে উৎপন্ন হইয়াছিলাম।
২৮/সেই শুভ বিমান সূর্য্য বর্ণ রুচিকর প্রভাস্বর ও কাঞ্চন জালাচ্ছন্নছিল। আমরা শরীর সূর্য্যের অনুপাম ষড়রশ্শির ন্যায় আকাশে শুভা পাইত।
২৯/আমরা দেবভবন সর্বদা নৃত্যগীত, সমাকুল ও কির্ণছিল।আমরা শয্যার চারদিকে ষাটি হাজার নানাবিধ দিব্য বাদ্যের মধুর ধবনি আমাকে নিন্দ্রা হইতে জাগ্রত করিত।
৩০/হস্থীযান অশ্বযান শিবিকা সংন্দন সমস্তই লাভ করিয়াছিলাম ইহাও আমার কঠিন চীবর দানের ফল।
৩১/বৃক্ষাগ্রে পর্বতাগ্রে আকাশে ভূমিতে সেখানে যখন আমি বস্ত্র ইচ্ছা করিতাম সকল সময়েই আমি তাহা লাভ করিয়াছিলাম।
৩২/আমি ইচ্ছা করিলে সমাগ্র পৃথিবী বস্ত্রে আচ্ছাদন করিতে পারিতাম ইহাও আমার কঠিন চীবর দানের ফল।
৩৩/বুদ্ধ পচ্ছেকা বুদ্ধ ও শ্রাবক দিগকে কঠিন চীবর দান দিলে সেই দান ফল শ্রেষ্ট বলিয়া সম্বুদ্ধগন কর্ত্তৃক বর্নিত হয়েছে।
৩৪/যেহেতু শিক্ষাকামী ভিক্ষুদের আপত্তি (পাপ) নাশ করে বলিয়াই সব দানের মধ্যে কঠিন চীবর দানই শ্রেষ্ট বলিয়া কথিত হইয়াছে।
৩৫/সেই বুদ্ধ পচ্ছেক বুদ্ধ ও শ্রাবকগন এই শ্রেষ্ট দান দ্বারাই উত্তম অরহত্ত্ব ফল লাভ করিয়াছেন।
৩৬/তদ্বেতুই পন্ডিডগন স্বীয় কল্যাণ কামনা করিয়া সংঘকে অন্তত অল্প দান করিয়াও মনুষ্য দেব ও নির্ববান সুখ করেন।
লেখক: প্রজ্ঞাপ্রিয় স্থবির, উপাধ্যক্ষ চকরিয়া মানিকপুর বিজয়ানন্দ বৌদ্ধ বিহার
No comments:
Post a Comment